প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস

মোস্তফাপুর আনোয়ারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা
স্থাপিত-১৯৭৪

নবীগঞ্জ উপজেলার অন্যতম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান মোস্তফাপুর অনোয়ারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসা। বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মরহুম মাওলানা শামছুদ্দিন (রহঃ) এলাকার জনসাধারণকে নিয়ে প্রথম ১৯৬৪ সালে এ মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। ভূমি দান করেন সাবেক মন্ত্রী ও কূটনৈতিক মোদাব্বির হোসেন চৌধুরী। ১৯৭১ সালে এক প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড়ে মাদ্রাসার কাঁচা গৃহ বিধ্বস্ত হলে বেশ কিছুদিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ১৯৭৪ সালে মাদ্রাসা মাঠে এক বার্ষিক ওয়াজ আমন্ত্রিত মেহমান হিসেবে আগমন করেন- হযরত মাওলানা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী সাহেব ক্বিবলা (রহঃ)। তিনি এসে বললেন এটা কিসের জলসা? যেখানে মাদ্রাসা নেই সেখানে জলসা কিসের? মাদ্রাসা গৃহ পুনরায় নির্মাণ না করলে, আমি এখানে ওয়াজ করব না বলে তিনি রাগ করেই মাওলানা শামছুদ্দিন (রহঃ) সাহেবের বাড়িতে চলে যান। এ সংবাদ চারদিকে প্রচারিত হলে স্থানীয় মুরব্বীগণ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিলেন আগামীকালই মাদ্রাসার নতুন গৃহ পুনঃনির্মাণ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে। এভাবে পরেরদিন ফুলতলী সাহেব, মাদ্রাসার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ হিসেবে ১৯৭৪ সালকে রেকর্ডপত্রে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা সাল দেখানো হয়।

এ সময় যারা শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তারা হলেন- মরহুম মাওলানা শামছুদ্দিন প্রতিষ্ঠাতা সুপার, মরহুম মাওলানা ওয়াছিকুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা ক্বারী আঃ রহিম চৌধুরী ও মাস্টার আখলুছ মিয়া প্রমুখ। মাদ্রাসার প্রথম বিল্ডিং নির্মাণ করে দেন বক্তারপুর গ্রামের বিশিষ্ঠ দানশীল ব্যক্তি হাজী আরজান উল্লাহ। উক্ত বিল্ডিং ২০০৫ সালে ভেঙ্গে বর্তমান দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয় ইংল্যান্ড প্রবাসীদের বিশেষ দানে। মাদ্রাসার বর্তমান বিল্ডিং সংখ্যা ৪টি, প্রত্যেক বিল্ডিং-ই দ্বিতল ভবন। পশ্চিমের বিল্ডিং সরকারীভাবে নির্মিত। পূর্বের বিল্ডিং রসজানপুর গ্রামের আজিজুর আজিজ সাহেবের দানে নির্মিত হয়। পৃথক হিফ্জ শাখা চালু আছে। ২০০৭সালে মাদ্রাসায় পৃথক একটি এতিমখানা চালু করা হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারী সংখ্যা ১৬জন, ১৯৮৪ সালে মাদ্রাসাটি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল স্বীকৃতি ও এমপিও ভূক্ত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছর অবৈতনিক ভাবে মাদ্রাসার সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মরহুম মাওলানা শামছুদ্দিন (রহঃ)। তাঁর ইন্তেকালের পর ভারপ্রাপ্ত সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তাঁর অন্যতম সহকর্মী সহ-সুপার আলহাজ মাওলানা তজম্মুল আহমদ জুরীর হুজুর। ১৯৯০ সালে সুপার পদে যোগদান করেন তরুণ আলিম মাওলানা মোঃ আব্দুন নূর। তিনি এ পর্যন্ত দুইবার উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ দাখিল মাদ্রাসার সুপার নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ ও ২০০২ সালে এ মাদ্রাসাটি জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ দাখিল মাদ্রাসা নির্বাচিত হয়।

মাদ্রাসার কযেকজন কৃতিছাত্র ঃ এখানে পড়ালেখা করে অসংখ্য ছাত্র দেশ-বিদেশে ইলমে দ্বীনের খেদমতে নিয়োজিত আছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- মাওলানা আলতাফ উদ্দিন সিনিয়র প্রভাষক তাহিরপুর মাদ্রাসা, মাওলানা এফ.কে.এম শাহজাহান সাবেক প্রিন্সিপাল সিলেট ক্যাডেট মাদ্রাসা ও মাওলানা আব্দুশ শহীদ সহ-সুপার অত্র মাদ্রাসা, মাওলানা ফয়জুর রহমান, মাওলানা শাহ এনামুল হক, মাওলানা কাজী ছলিম, মাওলানা দেলওয়ার হুসাইন, মাওলানা জিল্লুর রহমান, মোহাম্মদ হাদিছুর রহমান এরা সবাই অত্র মাদ্রাসায় কর্মরত আছেন। কাজী মাওলানা আঙ্গুর খাঁন ইলিয়াছ প্রভাষক সচিন্দ্র কলেজ, মাওলানা মোস্তফা কামাল ইংল্যান্ড, হাফিজ মাওলানা মুজির উদ্দিন, হাফিজ মাওলানা লুৎফুর রহমান, ফেরদৌস আহমেদ (সুইডেন প্রবাসী), মাওলানা জুবায়ের আহমেদ, মাওলানা আব্দুল মজিদ পিরিজপুরী, মোঃ আঃ কাবির, মোঃ গোলাম মরতুজা ও মোঃ এমদাদুল হক প্রমুখ।

প্রতিষ্ঠালগ্নে যারা বিশেল ভূমিকা রাখেন তাঁরা হলেন- প্রতিষ্ঠালগ্নে মোস্তফাপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী প্রায় সবক’টি গ্রামের জনসাধারণ স্বতস্ফূর্ত ভাবে সহযোগিতা করে আসছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- মরহুম মাওলানা ছিদ্দিকুল বারী কৈখাই, মরহুম মাওলানা ইবাদুর রহমান বানিউন, মরহুম ক্বারী আব্দুর রহমান নাদামপুর, হাজী আব্দুল মতলিব, হাজী আব্দুল মান্নাফ নাদামপুর, হাজী আরজান আলী, হাজী আক্কাছ আলী ও হাজী মকদ্দুছ আলী বক্তারপুর, মরহুম হাজী হাসিদ উল্লাহ, হাজী ফরজান উল্লাহ, হাজী কুবাদ উল্লাহ, তছর উল্লাহ ও মাহমুদ মিয়া মোস্তফাপুর, হাজী তাজফর উল্লাহ লালাপুর, হাজী তাজিম উল্লাহ প্রজাতপুর, হাজী রফিক উল্লাহ, হাজী আছগর উল্লাহ বানিউন, হাজী হুসমান উল্লাহ, হাজী সুরাব উল্লাহ মনসুরপুর, হাজী ইয়াজ উল্লাহ, হাজী ইসহাক উল্লাহ দিঘীরপার, হাজী তাজ উদ্দিন, মরহুম জাঁহাবখ্শ সরপঞ্চ লতিবপুর, হাজী কদর আলী, হাজী আজগর আলী, উস্তার উল্লাহ মোস্তফাপুর, হাজী শিকদার খাঁন, ও হাজী সাত্তার খাঁন নাদামপুর, মরহুম আইস উল্লাহ মোস্তফাপুর সহ অসংখ্য নাম নাজানা শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবগ মাদ্রাসার জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখেন।